গাজীপুর । গাজীপুর ভ্রমণ । গাজীপুর দর্শনীয় স্থান । রাত্রি যাপন সহ ইত্যাদি তথ্য
বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প এলাকা গাজীপুরে আপনাকে স্বাগতম। গাজীপুর ভ্রমণ হোক আনন্দের সাথে।
পরিচিতি-
বাংলাদেশের মধ্যঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল গাজীপুর। এটি অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের একটি বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা। ইহা ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংশ্লেষে কালোত্তীর্ণ মহিমায় আর বর্ণিল দীপ্তিতে ভাস্বর অপার সম্ভাবনায় ভরপুর গাজীপুর জেলা। এখানে মোগল-ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে গাজীপুরের রয়েছে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। গাজীপুরের উত্তরে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ, দক্ষিণে ঢাকা জেলা ও নারায়নগঞ্জ জেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ জেলা ও নরসিংদী জেলা এবং পশ্চিমে ঢাকা জেলা ও টাঙ্গাইল জেলা অবস্থিত। গাজীপুরে রয়েছে ৫টি উপজেলা (শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, কাসপিয়া ও গাজীপুর সদর এবং গাজীপুর শহরসিটি কর্পোরেশন এর অন্তর্ভূক্ত। গাজীপুর ইতিহাস খ্যাত ভাওয়াল পরগণার গহীনবনাঞ্চল আর গৈরিক মৃত্তিকাকোষের টেকটিলার দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক এ জনপদ ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ গাজীপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশেল অন্যতম জাতীয় বিশ্ববিদ্যায় প্রদাণ ক্যাম্পাস গাজীপুর জেলায় অবস্থিত। বরেণ্য ব্যক্তিগণের মধ্যে রয়েছে মেঘনাদ সাহা (জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী), মোঃ সামসুল হক (স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠা সভাপতি), ফকির শাহাবুদ্দীন (বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল), স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধান প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ইত্যাদি। গাজীপুরের অর্থনৈতিক প্রধান উৎস শিল্পকারাখানা।
যেভাবে যাবেন-
আপনি যে এলাকা থেকে গাজীপুর আসতে চাচ্ছেন। সেই এলাকার নাম এবং যেখানে যাবেন (গাজীপুর) সিলেক্ট করে আমাদের ওয়েবসাইটের হোম পেইজে সার্চ করুন। আমাদের ওয়েবসাইট (কেমনে যাবো ডট কম)-এ পাবেন, বাস কাউন্টার লোকেশন এবং ফোন নাম্বার, বাসের ভাড়া, বাসের ধরণ (এসি / নন-এসি) এবং সক্ষিপ্ত ইতিহাস।
দর্শনীয় স্থান সমূহ-
আকর্ষনীয় দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে রয়েছে-
ভাওয়াল রাজবাড়ী-
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের প্রায় ৫ একর জায়গার উপর দাড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ী। জমিদার লোকনারায়ন রায়ের মাধ্যমে এই রাজবাড়ীর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও রাজা কালিয়ারায়ন রায় নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। এখানে যা দেখবেন বড় দালান, রাজ বিলাস, পুরান বাড়ি, নাট মন্দির, হাওয়া মহল, পদ্ম নাভের মতো ভিন্ন ভিন্ন নামের ভবন।
গাজীপুর সদর চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর-রাজবাড়ী সড়ক ধরে পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলে ভাওয়াল রাজবাড়ী পৌঁছে যাবেন।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক-
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় মাওনা ইউনিয়নে এই পার্ক অবস্থিত। এই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক অন্যতম আকর্ষণ কোর সাফারি। সেখানে চারপাশে উন্মুক্ত বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, বণ্য হরিণ ও অন্যান্য প্রাণী হেঁটে বেড়াচ্ছে তার মাঝখানে মিনিবাস চলাচল ইত্যাদি অত্যন্ত আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান।
ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে ৪০ কি.মি উত্তরে অবস্থিত বাঘের বাজার থেকে ৩ কি.মি পশ্চিমে গেলেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান-
গাজীপুর জেলায় জয়দেবপুরের ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে গড়ে উঠেছে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। যেখানে গজারি বৃক্ষের আধিক্যের কারণে অনেকের কাছে এটি ভাওয়ালের গজারির গড় হিসাবেও পরিচিত। সেখানে রয়েছে অনেক প্রজাতির বৃক্ষ, গুল্ম, পাম, ঘাস, প্রজাতির লতা, ঔষধি গাছ ইত্যাদি।
গাজীপুর সদর থেকে ৩ কি.মি দূরে অবস্থিত জয়দেবপুর চৌরাস্তা পার হয়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান।
নুহাশ পল্লী-
গাজীপুর জেলায় পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশ পল্লী। নুহাশ পল্লীর প্রতিটি স্থাপনার মিশে আছে গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের স্পর্শ এবং প্রণয়। গাজীপুর সদর থেকে হোতাপাড়া বাস স্ট্যান্ডে আসতে হবে। হোতপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে টেম্পো, রিকশা অথবা সিএনজি করে নুহাশ পল্লী যাওয়া যায়।
সেইন্ট নিকোলাস চার্চ-
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় নাগরী ইউনিয়নে অবস্থিত খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান সেইন্ট নিকোলাস চার্চ। সেইন্ট নিকোলাস চার্চ হতে কালীগঞ্জের আঞ্চলিক বাংলা ভাষঅয় প্রথম দ্বিভাষীয় বাইবেল অনুদিত হয়। গাজীপুর সদর টঙ্গী হতে কালীগঞ্জের বাস কিংবা সিএনজি দিয়ে আহসানুল্লাহ মাষ্টার ফ্লাইওভার পেরিয়ে নলছটা সেতু হয়ে সেইন্ট নিকোলাস চার্চে যাওয়া যায়।
সারাহ রিসোর্ট-
গাজীপুর রাজাবাড়িতে অবস্থিত চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং শিশুদের প্রতি যত্নবান দৃষ্টিভঙ্গির জন্য খুব অল্প সময়ে সারাহ রিসোর্ট দর্শনার্থীদের মন জয় করে নিয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল ভিলা, প্রিমিয়িাম ভিলা, রাজা ভিউ টাওয়ার, ওয়াটার লজ, মাড হাউস, ডে লং প্যাকেজ ইত্যাদি।
বলিয়াদী জমিদার বাড়ী-
গাজীপুর জেলায় কালিয়াকৈর উপজেলার বলিয়াদী ইউনিয়নে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলিয়াদী জমিদার বাড়ী অবস্থিত। যেখানে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান বলে প্রতিষ্ঠিত বলিয়াদী এস্টেটের প্রথম কর্ণধর ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ) বংশধর কুতুব উদ্দিন সিদ্দিকীর পুত্র সাদ উদ্দিন সিদ্দিকী।
গাজীপুর জেলার চন্দ্রা নামক স্থানে নেমে কালিয়াকৈর বাস স্ট্যান্ড এসে সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে বলিয়াদী জমিদার বাড়ি যাওয়া যায়।
শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি-
গাজীপুর জেলায় কালিয়াকৈরের শ্রীফলতলী গ্রামে জমিরদার বাড়ি অবস্থিত। যেখানে রহিম নেওয়াজ খান চৌধুরীর মাধ্যমে এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন ঘটে।
দ্যা বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ-
গাজীপুর থেকে রাজেন্দ্রপুরে দেশের প্রথম আউট ডোর একটিভিটি ক্যাম্প দ্যা বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ গড়ে তোলা হয়েছে।
জল ও জঙ্গলের কাব্য-
গাজীপুরের টংগীর পুবাইলে ৯০ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে জল ও জঙ্গলের কাব্য। যেখানে রিসোর্ট প্রকৃতিকে অবিকৃত রেখে বাঁশ আর পাটখড়ি দিয়ে সুনিপুণ ডিজাইনারের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। গাজীপুর থেকে শিববাড়ী এসে অটো দিয়ে জল ও জঙ্গলের কাব্য যাওয়া যায়।
সোহাগ পল্লী-
গাজীপুর জেলায় কালামপুর গ্রামে ১১ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে সোহাগ পল্লী। যেখানে বেলকনিতে খোঁদাই করা কারুকাজ, নির্মিত লেক, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ইত্যাদি দেখা মিলে। গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় থেকে ৪ কি.মি দূরে কালামপুর গ্রামে গেলেই সোহাগ পল্লীর গেইট।
একডালা দূর্গ-
গাজীপুর জেলায় কাপাসিয়া উপজেলা অবস্থিত একডালা দূর্গ। সেখানে শীতলক্ষ্যা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম দিকে জনৈক হিন্দু রাজা ৫ কি.মি দৈর্ঘ্য এবং ২ কি.মি প্রস্থ বিশিষ্ট একডালা দুর্গ নির্মাণ করেন। গাজীপুর হতে কাপাসিয়া উপজেলায় গেলেই অটো নিয়ে একাডালা দূর্গে যাওয়া যায়।
বেলাই বিল-
গাজীপুর জেলার চেলাই নদী পাশে বেলাই বিল। যেখানে বাড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, ব্কতারপুর ও বামচিনি মৌজা গ্রাম ঘেরা একটি মনোমুগ্ধকর বেলাই বিল। গাজীপুর থেকে শিববাড়ি নেমে সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজি দিয়ে কানাইয়া বাজার হয়ে কানাইয়া বাজার ঘাটে বেলাই বিল।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থানঃ
- ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী, জয়দেবপুরে অবস্থিত।
- বিভিন্ন রিসোর্ট স্প্রিং ভ্যালি রেোসর্ট (গাজীপুর), রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট (রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট), আনন্দ পার্ক রিসোর্ট (কালিয়াকৈরর) ইত্যাদি।
- কাশিমপুর জমিদার বাড়ী।
- ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক।
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
- উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
- বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
- রথখোলা, জয়দেবপুর।
- উধুর জগন্নাথদেবের বিগ্রহ মন্দির, পূবাইল।
- ইত্যাদি।
যেখানে রাত্রিযাপন-
- ৩০০ টাকার রুম থেকে বিলাস বহুল রুম ভাড়া পাবেন। তন্মধ্যে রেস্ট হাউজ, ডাকবাংলো, আল-মদিনা, হোটেল জলি, হোটেল চ্যানেল ইন্টা, হোটেল অনামিকা, মডার্ন, জাপান আবাসিক, হোটেল ড্রীম ল্যান্ড আবাসিক, হোটেল এলিজা, গেস্ট হাউজ, মঞ্জুরী হোটেল, হোটেল রাজ মনি, হোটেল গাজীপুর, হোটেল ইশাখাঁ, ব্রাক সেন্টার ইত্যাদি ইত্যাদি।
- রুম বুকিং করতে পারেন – বুকিং রুম।
যেখানে খাবেন–
- গাজীপুর-এর খাবার? ———> এই শহরে বিখ্যাত খাবার কাঁঠাল ও পেয়ারা।
- যে খাবার এখানে বেশি জনপ্রিয় নানা রঙের পিঠা (তিলপুলি, মুগপুলি, রাঙ্গাপুলি, ক্ষীরপুলি, ভাপাপুলি, ক্ষীরসা পুলি, চিড়ের পুলি ইত্যাদি)।
- এই শহরে দু’কদম হাটলেই বিভিন্ন রেষ্টুরেন্ট, ক্যাফে, হোটেলে খাবার জুটে।
পছন্দের কেনাকাটা–
- গাজীপুরের জনপ্রিয় শপিংমলসমূহ মেঘা বেস্ট ফ্যাশন হাউজ, আনোয়ারা শপিং কমপ্লেক্স, বিউটি প্লাজা শপিং কমপ্লেক্স, নাঈম ফ্যাশন।
- এখানে রয়েছে নানা ধরণের শিল্প বাণিজ্য কাজেই বিভিন্ন গার্মেন্টস কাপড় পাওয়া যায়।
- এই শহরে কেনকাটা হোক আনন্দের সাথে।
কোথায় গাড়ি পাব? কাউন্টার কোথায়? গাড়ি না পেলে কী করবো? রাতে কী গাড়ি পাব? থাকার জায়গা পাব? রেস্টুরেন্ট খোলা থাকবে?
- গাজীপুর যে প্রান্তে আসবেন না কেন? কিংবা যেখানে থাকেন না কেন? আপনি খুব সহজেই আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। সব স্টেশনে আপনি কাউন্টার পাবেন। প্রতিটা ষ্টেশনে বিভিন্ন বাস কাউন্টার রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে আপনার গন্তব্যের ঠিকানা খুঁজে নিতে পারবেন।
- বাস স্ট্যান্ড ২৪ ঘণ্টা যাতায়াত ব্যবস্থা খোলা থাকে। আপনি নিচের দিকে স্ক্রল করলে বাসের ঠিকানা পেয়ে যাবেন।
- প্রতিটা স্টেশনে, অলি-গলিতে আপনার থাকার ব্যবস্থার য়েছে। উপরে লিংকে প্রবেশ করে রুম বুক করতে পারেন।