পঞ্চগড় ভ্রমণ । কোথায় থাকবেন? খাবেন? দর্শনীয় স্থান সমূহ, ইতিহাস ও নামকরণ ইত্যাদি
ভর্তা পছন্দ করে না এমন লোক খুব কম! আর এই ভর্তা প্রেমীদের জন্য “সিদন ভর্তা” খ্যাত পঞ্চগড়ে স্বাগতম। পঞ্চগড় ভ্রমণ হয়ে উঠুক আনন্দময়।
পরিচিতিঃ
রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হচ্ছে পঞ্চগড়, এটি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা, পঞ্চগড় বাংলাদেশের অতি প্রাচীন জনপদ। ৫টি উপজেলার সমন্বয়ে পঞ্চগড় জেলাটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিস্তৃত। পঞ্চগড়ে অধিক নদীর স্থান থাকার কারণে, একে নদি বেষ্টীত জেলা বলা হয়। এই জেলাটি “বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থুল বন্দরের” জন্য বিখ্যাত, এছাড়া হাড়িভাঙ্গা, আম, তামাক ও আখের জন্য এই অঞ্চল বিখ্যাত।
নামকরণঃ
পঞ্চগড়ের নাম নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে তাঁর মধ্যে কিছু ধারণা হচ্ছেঃ ‘পঞ্চনগরী’ একটি রাজ্যে থেকে কালক্রমে ‘পঞ্চগড়’ নামটি আত্মপ্রকাশ করে। আরেকটি ধারণা হলোঃ এই অঞ্চলের পাঁচটি গড়ের( ভিতরগড়, মিরগড়, রাজগড়, হোসেনগড়, দেবেনগড়) সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণেই ‘পঞ্চগড়’ নামটির উৎপত্তি। আবার অনেকে মনে করেন, ‘পঞ্চ’ শব্দের অর্থ ‘পাঁচ’, আর ‘গড়’ শব্দের অর্থ ‘বন’ বা জঙ্গল। ভারত ভাগ হওয়ার পূর্বে এই অঞ্চল জঙ্গলাকীর্ণ থাকায়, তা থেকেও এই অঞ্চলের নাম পঞ্চগড় হতে পারে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
আগেই বলেছি, পঞ্চগড় একটি প্রাচীন জনপদ। অতীত কালে জনপদটি ছিল সীমান্ত অঞ্চল যেটি বর্তমানেও বিদ্যামান। এর পাশেই ছিল মগদ, মিথিলা, গৌড়,নেপাল, ভূটান, সিকিম ও আসাম রাজ্যের সীমান্ত। ১৮৬৯ খ্রীস্টাব্দে জলপাইগুঁড়ির থানার অধীনে আসার পূর্বে, পঞ্চগড় রংপুর জেলার অধীনে একটি মহাকুমা ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ; পঞ্চগড় থানাটি দিনাজপুর জেলার ঠাঁকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পঞ্চগড় মহকুমায় উন্নীত হয় (১৯৮০) খ্রীস্টাব্দে। ৫ টি থানা (তেতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, অটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ) নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা সৃষ্টি হয়। (১৯১১) খ্রিস্টাব্দে পঞ্চগড় থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
পঞ্চগড়ের দর্শনীয় স্থান সমূহঃ
পঞ্চগড় ভ্রমণ করতে ইচ্ছে হলে নিম্নের দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।
মহারাজার দিঘীঃ
“মহারাজার দিঘী” হচ্ছে একটি বিশাল আয়তনের জলাশয়। যেটি রাজপ্রাসাদের সন্নিকটে ছিল; তাই এটি “মহারাজার দিঘী” নামে পরিচিতি পায়। ধারণা করা হয়, পৃথু রাজা এই দিঘীটি খনন করেন। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে উক্ত দিঘীর পাড়ে মেলা বসে।
যেভাবে যাবেনঃ পঞ্চগড় বাস টার্মিনালে থেকে তেঁতুলিয়াগামী বাসে করে বোর্ড অফিসের সামনে নেমে, রিক্সা অথবা ভ্যানে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দিঘীতে যেতে পারবেন।
রকস মিউজিয়ামঃ
বাংলাদেশের একমাত্র জাদুঘর পাথরের জাদুঘর পঞ্চগড়ে অবস্থিত। এটি পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে স্থাপন করেছেন, অধ্যক্ষ নাজমুল হক(১৯৯৭)। এতে বিভিন্ন রঙ, আকৃতি, এবং বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পাথর সংরক্ষিত আছে। হাজার বছরের পূরনো পাথর ছাড়াও এখানে প্রাচীন ইমারতের ইট এবং পোড়ামাটির বিভিন্ন মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়।
যেভাবে যাবেনঃ দিনাজপুর কিংবা পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেন এবং ডেমু করে পঞ্চগড় যাওয়া যায়।
গোলকদাম মন্দিরঃ
এটি রংপুর জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। এটি নির্মিত হয় (১৮৪৬) সালে। পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত একটি প্রাচীন মন্দির এটি। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এই মন্দিরটি দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাংগা ইউনিয়নের, শালডাংগা গ্রামে অবস্থিত। এটি সদর হতে প্রায় ১২ কি.মি. হতে উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত।
যেভাবে যাবেনঃ সড়ক এবং রেলপথ উভয়তে পঞ্চগড় যেতে পারবেন। পঞ্চগড় হতে দেবীগঞ্জ উপজেলার গিয়ে, শালডাংগা ইউনিয়নের শালডাংগা গ্রামে যেতে পারবেন। রাজধানী রেল স্টেশন থেকে দিনাজপুরগামী অন্তঃনগর ট্রেনে উঠে, দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকেও বাসে চড়ে পঞ্চগড় যেতে পারবেন।
তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোঃ
তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো হিমালয়ের পাদদেশে দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দার তটে অবস্থিত। এটি জেলা পরিষদ দ্বারা পরিচালিত। প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন গাছপালা রয়েছে এখানে। এছাড়াও পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তার দৃশ্য দেখা যায় এখানে।
যেভাবে যাবেনঃ শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড অথবা চৌরঙ্গী মোড় থেকে কার বা মাইক্রোবাস ভাড়া করা যেতে পারেন, এর জন্য ভাড়া গুণতে হবে আড়াই-তিন হাজার টাকা।
বার আউলিয়ার মাজারঃ
বিখ্যাত সুফী ও পীর দরবেশদের পবিত্র চরণ, এই অঞ্চলের ধূলি মাটিকে ধন্য করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য “বার আউলিয়ার মাজার”। বার জন আউলিয়ার নামে এর নামকরণ হয়েছে ” বার আউলিয়া”। ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্য তারা সুদূর পারস্য, ইয়েমেন ও আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে চট্রগ্রামের শহরে আস্তানা গেড়েছিল। তাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন, হেমায়েত আলী শাহ(রা.)। তাঁরই অধীনে আউলিয়াগণ আটোয়ারীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। উপজেলা সদর হতে ৯ কি.মি. উত্তর-পূর্বে মির্জাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই মাজার।
যেভাবে যাবেনঃ অটোয়ারী বাস স্ট্যান্ড থেকে মির্জাপুর ৬ কিলোমিটার পথ। সেখান থেকে রিক্সা, ভ্যানযোগে “বার আউলিয়া” মাজার শরীফে যাওয়া যায়। রেল পথে গেলে দিনাজপুর স্টেশনে নেমে, অটোয়ারী রেলস্টেশন হয়ে বাস/রিক্সা/ভ্যানযোগে ৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলে অটোয়ারী উপজেলা।
এছাড়াও পঞ্চগড়ের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান সমূহ হলোঃ
- ভিতরগড়,
- মিরগড় করতোয়া নদী,
- এশিয়ান হাইওয়ে,
- মহারাণী বাঁধ সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে পঞ্চগড় জেলায়।
পঞ্চগড়ে একাধিক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হলো।
চিত্র নায়ক আব্দুর রহমানঃ
জন্মগ্রহণ করেন পঞ্চগড় জেলায় অটোয়ারী উপজেলার রসেয়া গ্রামে এবং তাঁর অভিনয়, উপমহাদেশের মানুষের অন্তরে এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। রহমান-শবনাম জুটি সমসাময়িক কালে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে জোয়ার-ভাটা, আমার সংসার, তালাস,মিলন অন্যতম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলামঃ
তিনি পঞ্চগড় জেলার বোদা থানায় ময়দানদিঘি ইউনিয়নের মহাজন পাড়ায়, এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে চল্লিশ এর দশকে জন্ম গ্রহণ করেন। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২’এর শিক্ষা আন্দলোন, ৬৬ ছয় দফা এবং সর্বোপরি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, বাংলাদেশ হয়ে তৎকালীন সময়ে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন।
কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদঃ
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৮ সালে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় এবং ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দলোনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে প্রথম কারাবরণ করেন এবং ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জঙ্গী ছাত্র আন্দোলন ও শিক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
পঞ্চগড় ভ্রমণ করতে গিয়ে পুরো জেলা ঘুরতে চাইলে অবশ্যই একদিনে শেষ করতে পারবেন না। আর আপনার রাত্রি যাপনের সুবিধার জন্য ; কিছু হোটেল এবং আবাসনের তালিকা নিম্নরুপ।
হোটেল/মোটেল/রেঁস্তোরা/রেস্ট হাউস/গেষ্ট হাউস/ ডাকবাংলো ইত্যাদির তালিকা দেওয়া হলোঃ
- হোটেল মৌচাক আলহাজ্ব, ফোন (০৫৬৮-৬২৪৬৮),(০১৭১৫২১৯৩৭৩),
- প্রিতম হোটেল, ফোন(০৫৬৮-৬১৫৪৫),
- এইচ কে প্যালেস, ফোন(০৫৬৮-৬১২৩৯)(০১৭৫২২৪৩০৪৮),
- ইসলাম হোটেল, ফোন( ০১৭২১০১২৬২৫),
- রাজনগর, ফোন(০১৭১৫২১৯৩৭৩),
- নীরব রেস্ট হাউস, ফোন(০১৭৩৪৩৪৪৭১৫),
- সেন্ট্রাল গেষ্ট হাউস, ফোন(০১১৯০৭১৬০২৭),
- রোকখানা বোর্ডিং, ফোন(০১৭১৪৯২৭৫৪৯) এবং
- হিলটন বোডিং, ফোন(০৫৬৮-৬১৩২৮)।
- অনলাইনে বুকিং দিতে এখানে ক্লিক করুন।
যেভাবে যাবেনঃ
আপনি যে এলাকা থেকে পঞ্চগড় আসতে চাচ্ছেন? যেমনঃ (ঢাকা থেকে পঞ্চগড়) আমাদের ওয়েবসাইটের হোম পেইজে “অনুসন্ধান” ঘরে সার্চ করুন। আমাদের ওয়েবসাইট (কেমনে যাবো ডট কম) এ পাবেন, বাস কাউন্টার লোকেশন এবং ফোন নাম্বার,বাসের ভাড়া,বাসের ধরন (এসি/নন-এসি)।
কোথায় গাড়ি পাব? কাউন্টার কোথায়? গাড়ি না পেলে কী করবো? রাতে কী গাড়ি পাব? থাকার জায়গা পাব? রেস্টুরেন্ট খোলা থাকবে?
- পঞ্চগড় ভ্রমণ করতে যে প্রান্তে আসবেন না কেন, কিংবা যেখানে থাকেন না কেন? আপনি খুব সহজেই আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। সব স্টেশনে আপনি কাউন্টার পাবেন। প্রতিটা ষ্টেশনে বিভিন্ন বাস কাউন্টার রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে আপনার গন্তব্যের ঠিকানা খুঁজে নিতে পারবেন।
- আপনার কাউন্টার খুঁজে পেতে আমাদের নিচের বাস কাউন্টার নাম্বার সংগ্রহ করে যোগাযোগ করলে আপনাকে নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে দিবে।
- বাস স্ট্যান্ড ২৪ ঘণ্টা যাতায়াত ব্যবস্থা খোলা থাকে। আপনি নিচের দিকে স্ক্রল করলে বাসের ঠিকানা পেয়ে যাবেন।
- প্রতিটা স্টেশনে, অলি-গলিতে আপনার থাকার ব্যবস্থার য়েছে। উপরে লিংকে প্রবেশ করে রুম বুক করতে পারেন।
পঞ্চগড় জেলার ইতিহাস এর মতো বাংলাদেশের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানসমূহের তথ্য (কাউন্টার লোকেশন ও ফোন নাম্বার, ভাড়া, বাসের ধরণ (এসি / নন-এসি) এবং এরিয়ার পরিচিতি, যেখানে থাকবেন এবং খাবেন) পেতে এই লিংকে ক্লিক করুন।